জিরো বাউন্ডারি কবিতার ষষ্ঠ সংখ্যার জন্য লেখা জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট জুলাই মাসের ১০ তারিখ। দুটো কবিতা বা কবিতা বিষয়ক লেখা নিজের এক কপি ছবি সমেত পাঠিয়ে দিন আমাদের ইমেলে-0boundarykabita17@gmail.com

কবি বিশ্বজিৎ দাসের সাক্ষাৎকার













এই সময়ের উল্লেখযোগ্য এক তরুণ কবি বিশ্বজিৎ দাস যিনি কবিতাকে তাঁর মতো করে লিখছেন। তাঁর কবিতার ভাষা ও চয়ন বেশ smart এবং ইদানীং কাব্যিক ভাব দারুণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাঁর কবিতা আমাদের নিয়ে যায় কবিতা নিয়ে সাহস দেখানোর মানসিকতা ।  এ হেন তরুণ কবির সাক্ষাত্কার নিয়েছেন আর এক তরুণতম কবি অভিজিৎ দাসকর্মকার যিনি জিরো বাউন্ডারি গ্রুপ থেকেই উঠে এসেছেন দারুণ ভাবে।



১. প্রথমে আমি আপনার কবিতাযাপন আমাদের  সকল পাঠাকের কাছে তুলে ধরতে চাই।


বিশ্বজিৎ :   কবিতা যাপন বলতে আমি চেয়ার-টেবিল বুঝি না, খাতা-কলমও না, আমি সিচুয়েশনে বিশ্বাসী; একবার তা এলে শব্দেরা ঝরে পড়ে রঙিন হয়ে মনের মধ্যে| ভিতরের মানুষটা, জানোয়ারটা, দানবটা, অতিসভ্যলোকটা তখন আমাকে ব্যতিরেকে লিখে ফেলে এক একটি কবিতা অথবা শব্দগাঁথা...আর আমি শুধু পাঠকের দরবারে ওয়েটারের মতো তা পরিবেশন করি...



২. আপনার লেখালেখি জীবনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কাদের অবদানকে আপনি বেশি প্রাধান্য দেবেন?

বিশ্বজিৎ:   আবহমান বাংলা কবিতা, কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়, কবি আবিদ আজাদ, কবি চঞ্চল আশরাফ, কবি আফজল আলি, কবি অনিন্দ্য রায়, কবি জুবিন ঘোষ প্রমুখ আমাকে বাংলা কবিতার পথ চিনিয়েছেন; বাকিটা ব্যক্তিগতই থাক!



৩. কবিতাযাপনে আপনার পড়াশুনো কতটা কাজে লেগেছে বা কবিতা লেখার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার কতটা প্রভাব থাকে?

বিশ্বজিৎ:  যে কেউ কবিতা লিখতে পারে| কবিতা লেখার যেমন কোনো বয়স হয় না; তেমনি সবজান্তা হতে হবে এমনও নয়| তবে নিজের প্রয়োজনে পূর্বসুরীদের স্মরণ করাটা আমি জরুরি মনে করি| ইতিহাসকে যে অস্বীকার করে, সে আসলে এই পৃথিবীর সন্তানই না... আর আমার পড়াশোনাকে আমি আলাদা ভাবে কিছু দেখি না সবমিলিয়েই এই জগত! মিলিবে কিংবা মিলিবে না ভবের দেখা এই ভবের মাঝে...



৪. শুনেছি আপনি বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনো করেছেন এবং বর্তমানে বাংলাদেশের কবিদের নিয়ে পিএইচ.ডি. করছেন, তার কাজ সম্পর্কে আমাদের পাঠকদের যদি কিছু বলেন!

বিশ্বজিৎ:  যখন ভূখণ্ড আলাদা হলেও দুটো ভৌগোলিক অবস্থানের ভাষা ও সাহিত্য চর্চা এক, তা যতই প্রাদেশিক কিংবা রাষ্ট্রময় হোক না কেন; আসলে তা এক জাতির কন্ঠে লালিত... আর সে ভাষা বাংলা... এইরকম একটা কৌতূহল থেকে আমার এম.ফিল-এর গবেষণার বিষয়বস্তু নির্বাচন করেছিলাম| যার সময় ধরা ছিল ১৯৪৭-১৯৭১ পূর্বপাকিস্তানের বাংলা কবিতা| তারপর আবার যখন পিএইচডিতে সুযোগ পাই, তখন আমার শ্রদ্ধেয় স্যার, গাইড কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেখ রফিকুল হোসেন ও আমার বর্তমান গাইড অধ্যাপক ড. মানস কবি (আশুতোষ কলেজ) ও আমি, তিনজনে মিলে ঠিক করি এবারের কাজ হবে — বাংলাদেশের কবিতা (১৯৭১-২০০০) এবং এটাই শেষ পর্যন্ত ফাইনাল হয়| যদিও আমার গবেষণায় শূন্য ও প্রথম দশক থাকবে|
    গবেষণা সম্পর্কে কোনো কথাই সংক্ষেপে বলা যায় না এটাই সমস্যা| বাংলাদেশের ইতিহাস ভূগোল রাজনীতি অর্থনীতি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা জানার পর কবিতার প্রেক্ষিত, বিষয় ও আঙ্গিক(শৈলী) নিয়ে চর্চা শুরু হয়| 




৫. আজকাল অনেক প্রিন্টেড বা ব্লগ ম্যাগ, ওয়েব ম্যাগ প্রকাশিত হচ্ছে। সেখানে ভালো কাজও হচ্ছে। আপনি 'সিসিফাস' প্রিন্টেড পত্রিকার সম্পাদনা করেন। প্রিন্টেড না ব্লগ ম্যাগ কোনটাকে প্রাধান্য দেবেন ?

বিশ্বজিৎ :  আমি সিসিফাস পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক ছিলাম| সম্পাদক শিবাজী সেন| আমাদের সাহিত্যের বর্তমান চেহারায় আমি কোনো কালি বা রঙ দেব না|  প্রিন্টেড না ব্লগ এই বিতর্কে না গিয়ে বলি, ছাপা বই আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ব্লগজিন বা  e-ম্যাগাজিন আমাদের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার| আমার মতে দুটোই চলুক দুরকম স্পর্শ আর সুগন্ধি ছড়িয়ে| এখনও পাঠকের মধ্যে e-book বা e-magazine স্বচ্ছ নয়| তাছাড়া ব্লগ বা ম্যাগাজিনে লেখা অনেক সময় বানান ভুল অবস্থাতেই প্রকাশ পায় এবং লেখা সংরক্ষণের বিষয়টাও দেখা উচিত| 




৬. আধুনিক যুগ থেকে বর্তমান যুগের কবিতায় কোনো পরিবর্তন আপনি লক্ষ করেছেন কি ? তা কী ধরনের যদি বলেন-

বিশ্বজিৎ : 
√ ঈশ্বর ভজন! আধুনিকেরা ঈশ্বরের প্রতি সংশয় জ্ঞাপন করে যাত্রা শুরু করেছিলেন| উত্তর আধুনিকেরা আবার ঈশ্বরে ফিরছেন| তবে তা একেবারেই প্রয়োজনের ঈশ্বর! কবিতায় ঈশ্বরের ছড়াছড়ি...

√ প্রযুক্তিজাত ও স্ল্যাং এই দুই এ্যন্টেনা জড়িত শব্দেরা এখন জামা খুলে হারবার্ট সরকারের মতো খেলা দেখাচ্ছে|

√ বাংলা কবিতায় আরো বেশি আঁতেল ও অশিক্ষিত যোগ দিয়েছেন| কবিতায় তেলের আধিক্য ও শব্দের সংযম হারাতে বসেছে, যা ফেসবুকে, ব্লগে ও ছাপা কবিতায় প্রত্যক্ষ করা যায়|

√ আঙ্গিকে নতুনত্ব ভাবনা রাখার একটা প্রচেষ্টা রয়েছে|

√ বিষয় হিসেবে সমকালীন থেকেও বিভিন্ন অনালোকিত স্তর নিয়ে কাজ হচ্ছে|

√ সর্বোপরি প্রিয় কবি, সুহৃদ আফজলদার জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্ট আধুনিক ও বর্তমান যুগের সাহিত্য আলাদা করে দেখার একটি স্বচ্ছ আয়না একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে|





৭. আমরা হাংরি আন্দোলনের সময়কার কবিতায় যে যৌনতার বা যৌন শব্দের  প্রভাব দেখেছিলাম। এদেশে তার গ্রহণযোগ্যতাও আমরা দেখেছি। আবার এখনকার কবিতাতেও এই ধরনের শব্দের ব্যবহার উঠে আসছে। তাতে এ-সময়ের কবিতায় কী প্রভাব পড়বে বলে আপনার মনে হয়?

বিশ্বজিৎ : সমীর রায়চৌধুরী, মলয় রায়চৌধুরী, দেবী রায়, ফাল্গুনী রায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখরা তৎকালীন সময়ের প্রেক্ষিতে হাংরি আন্দোলন করেছিলেন আর এখন অপ্রয়োজনে, হুজুগে এবং বিনা কারণে বঁধূয়া পটানোর জন্য ব্যবহার হচ্ছে| এটা হাংরির কোনো প্রভাব নয়| বরং বলা ভালো একটা অপসংস্কৃতির পরিচয়| তবে অনেকেই যৌনতাকে ব্যবহার করছেন শক্তিশালী কলমে| ইদানিং একজনের লেখা দেখছি, আমার সঙ্গে আলাপ নেই যদিও; তিনি কৃপা বসু| 





৮. আপনি কি আফজল আলি-র জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্ট পড়েছেন? এখন এই দর্শনের উপর দাঁড়িয়ে কবিতার উন্নয়ন কতদূর হতে পারে বলে আপনার মনে হয়?

বিশ্বজিৎ : হ্যাঁ, পড়েছি| এতদিন কবিতার কাছে অনেকগুলো জামার পকেট ছিল; যা ব্যবহার হতো না, আবার সাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল না| জিরো বাউন্ডারি কবিকে সেই পকেটগুলোতে বিভিন্ন সুগন্ধি ফুল ছড়িয়ে জামার অর্থাৎ অর্থময়তাকে আরও রঙিন করে তুলেছে| কবিতার কোনো সীমানা থাকতে পারে না এ চিন্তা বিংশ শতকেও আসেনি; প্রগাঢ় জীবনবৃত্তান্ত থেকে কবি চিন্তাবিদ্ প্রাবন্ধিক আফজল আলি তুলে আনলেন এক চেনা পথের দর্শন| তিনিই প্রথম বললেন কবিতার কোনো বাউন্ডারি থাকবে না| তাঁর দর্শন, ভাবনায় দেখা গেল, উত্তর আধুনিক কাঠামোবাদের সঙ্গে টলস্টয় বা গান্ধীর স্বপ্নের বাঁধাহীন রাষ্ট্রের তত্ত্ব| বস্তুবাদের সঙ্গে ভাববাদের অপূর্ব সম্মিলন| শব্দের ডানা মেলে ওড়ার স্বাধীনতা| স্ট্রাকচারাল দিক থেকেও তিনি দেখালেন, বাক্যের গঠনগত ক্যাবিক ব্যাকরণের আদর্শ| কোনো শব্দ বা ভাষা অচ্ছুৎ নয়| সময়োপযোগী ধারণার নিগড়মূলে তাঁর আগামী বিশ্ব কবিতার ইতিহাসে বিশেষ জায়গা করে নেবে বলেই আমার ধারণা|





৯. আধুনিক বা উত্তর আধুনিক বাংলা কবিতায় মেধা ও মননকে কতটা প্রাধান্য দিয়েছে? এবং জিবাক দর্শনে মেধা ও মননকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে আপনার মনে হয়?

বিশ্বজিৎ : কবিতায় মেধা ও মননকে সর্বকালেই গুরুত্ব দেওয়া হয়, যদি তা কাব্য অথবা কবিতার শর্ত পূরণ করে| জিরো বাউন্ডারি যেহেতু একটা দর্শন এবং স্পষ্ট করে বলা ভালো সাহিত্যিক দর্শন; সেহেতু দর্শনের মধ্য দিয়েই সাহিত্যের তত্ত্ব ও প্রাণের মধ্যে একমাত্র মেলবন্ধন ঘটানোর যথেষ্ঠ সংলক্ষণ রয়েছে এই সীমানাহীন জিরো বাউন্ডারিতে|





১০. কবিতার বিভিন্ন  ধরনের ছন্দের গ্রহণযোগ্যতা আমরা জানি এবং জিরো বাউন্ডারিও  ছন্দকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ-বিষয়ে আপনার দৃষ্টি ভঙ্গি কী?

বিশ্বজিৎ : 'জিরো বাউন্ডারি' শব্দবন্ধের মধ্যেই তো আছে কোনো বাউন্ডারি বা বাধা অথবা রুটলাইন থাকবে না| তাহলে তা সব ধরণের ছন্দকে স্বীকার করবে এটাই স্বাভাবিক|




১১. আফজল আলি-র সৃষ্ট জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্ট আমাদের সমাজকে বা ব্যক্তিগত জীবনকে কতটা প্রভাবিত করতে পারবে বলে আপনার মনে হয়?

বিশ্বজিৎ : বর্তমান সমাজ ও জীবন এতটাই জটিলতায় পরিপূর্ণ, যে মুক্তবায়ু, মুক্তমন ও মুক্তচিন্তনের বড় অভাব| চারিদিকে বিষাক্ত পরিবেশ, টিভি সিরিয়াল নিষিদ্ধ পথের কথা বলে, সিনেমায় অলৌকিকতা আর জীবন নাশের পদ্ধতি শেখানো, শিক্ষায় গুরুর অস্তিত্ব বিলুপ্তপ্রায়; এইরকম একটা পরিস্থিতিতে বলা হয়নি, কেন আমরা স্বাধীনতা নেব? কিভাবে বাঁচব? নিখিলেশের মতো ভেতরের কুকুরটাকে আদতেও দেখতে পাবো কিনা? হয়তো চাইও না| জিরো বাউন্ডারি এই অস্তিত্বহীনতার ভিতরে, জীবনের কাছে, জগতের মধ্যে এবং সমাজের অভ্যন্তরে সলতে পাকায় সুস্থ স্বাভাবিক ও সম্পূরক জীবনের কথা বলাতে, প্রাণের আনন্দে পথ চলতে|





১২. জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্ট বলছে মুক্ত চিন্তনের প্রথম ধাপ BOUNDARY বিলোপ---এই ধারণার উপর যদি আলোকপাত করেন।

বিশ্বজিৎ : মূলত যে যান্ত্রিকতার ভিতর দিয়ে আধুনিকতার সূত্রপাত, কনসেপ্টচুয়াল রিভোলিউশানের ফলে আধুনিকতা ভেঙে উত্তরাধুকিতার জন্ম এবং উত্তরাধুনিকতা স্ট্রাকচারাল সীমারেখায় আচ্ছন্ন, জিরো বাউন্ডারি সেই যান্ত্রিকতা, আগ্রাসন, বাধা, শৃঙ্খল ইত্যাদি থেকে শিল্প ও সাহিত্যে মুক্তি এবং মুক্ত চিন্তনের দিশারী হিসেবে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়|




১৩. বর্তমান কবিতায় বা শিল্প সাহিত্যে DELIMITATION শব্দটির গুরুত্ব কী,যদি আমাদের পাঠকদের একটু জানান!

বিশ্বজিৎ : ডিলিমিটেশন কথাটি বর্তমান সাহিত্যের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ| যেখানে শিল্প ও সাহিত্যের কাঠামো বা আঙ্গিকগত দিক থেকে মুক্ত চিন্তনের সহায়ক| সীমাবদ্ধতা নয়, সাহিত্য হয়ে ওঠার বিষয়টি এখানে তাৎপর্যপূর্ণ| যা মানুষের ভিতরে অনন্ত কালে জন্য সৃষ্টি করে বিনয়সারসের উড়ে যাওয়া...




১৪. Shift from one angle to another one aspect to another বা প্রতিরোধহীন Dimension change এর প্রভাবে কবিতার উন্নয়ন কতটা সম্ভব ?

বিশ্বজিৎ : অবশ্যই জীবনযাপনের জটিলতা বর্তমান কালের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য| সেই বৈশিষ্ট্যের নিরিখে একজন মানুষ তাঁর উদ্দেশ্যহীনতা, অসহায়ত্ব এবং একইসঙ্গে আনন্দ উপল‌দ্ধির মধ্যে যে ট্রাজিক মুহূর্তের সাক্ষী হচ্ছেন তা সমস্যাবহুল বহুমাত্রিক জীবনেরই ফসল! একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টা বোঝা যাবে, ধরুন কোনো একজন পুরুষ বা মহিলা কাচঘেরা বাথরুমে মাল্টিকালার আলো ও মিউজিক সহযোগে স্নান করছেন এবং বাথটবের জলে শুয়ে দুঃখগুলো, শূন্যতাগুলো ধুয়ে ফেলতে চাইছেন, তাহলে তাঁর জীবনের কোন্ সম্ভাবনার কথা আমরা বলতে পারব? তিনি সুখী? নাকি দুঃখী?  না বিকার গ্রস্থ? ইত্যাদি আরো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে আমাদের, এই বহুমাত্রিক প্রশ্নের মতোই শিল্প ও সাহিত্যে জীবনের বহুমাত্রিক দিক উঠে এসেছে| সুতরাং সমস্যা যখন আমাদের অনেক, তখন শিল্প-সাহিত্য তা থেকে পৃথক হবে কেন? কারণ শিল্প-সাহিত্য তো জীবনেরই কথকতা...




১৫. Hybridity বা Sandwich সিস্টেম কে আফজল আলির জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্ট গ্রহণ করেছে--এতে কি কবিতার পরিসর বাড়বে বলে আপনার মনে হয়?

বিশ্বজিৎ : অবশ্যই বাড়বে কারণ সমকালীন জীবনযাত্রার মান দেখলে তা বোঝা যায়, একইসাথে আমরা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিবিধ ভূমিকা পালন করি| এই ব্যস্ত ও কর্মমুখর জীবনেরই আঙ্গিক সাহিত্য| কবিতার ক্ষেত্রে দুটি আলাদা ভাবের কবিতাকে শেষ পর্যন্ত অর্থগত সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে অন্য এক উৎসের দিকে নিয়ে যাওয়া এই স্যাণ্ডউইচ সিস্টেম আসলে জিরো বাউন্ডারির ভাবনাকেই সমর্থন করে|





১৬. জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্টে শূন্যের গুরুত্বটা যদি একটু পরিস্কার করেন,আপনার ভাবনা থেকে?

বিশ্বজিৎ: শূন্য বলতে এখানে জিরো অসীমের দিক নির্দেশ করেছে| যেখানে কবিতা বা শিল্প তার নিজস্ব অভিমুখে এগিয়ে যাবে এবং স্রষ্টার মনোজগতকে উপলব্ধি করাবে পাঠককে...





 ১৭. কবিতার জাড্য বা জড়তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য জিবাক কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে আপনার মনে হয়?

বিশ্বজিৎ : জিবাক বর্তমান সময়ের কবিতার, জীবনের, যাপনের ও মুক্তচিন্তনের এক অন্যতম প্লাটফর্ম| কবিতার জাড্য বা জড়তা বা লিমিটেশন থেকে বেরিয়ে আসার সমস্ত রকমের পথ দেখিয়েছে| এরজন্য জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্ট এর তত্ত্বটি পড়ার জন্য পাঠককে অনুরোধ করব|





১৮. জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্ট বলছে কবির মাত্রা Frequency Density Power-এ সমস্ত কিছুর সমন্বয়ী বহিঃপ্রকাশ হল কবিতা।তাছাড়া আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্রে Maturity শব্দের গুরুত্বটি যদি একটু আমাদের পাঠকদের সামনে তুলে ধরেন-

বিশ্বজিৎ : ফ্রিকোয়েন্সি, ডেসটিনি, পাওয়ার-এ সমস্ত কিছুর সমন্বয়ী বহিঃপ্রকাশ যেমন কবিতা, তেমনি তার মূলে রয়েছে কবিত্বশক্তি| একজন কবি কতটা শক্তিমান তার সৃষ্টিতে, তা কবিত্বশক্তির উপরে নির্ভরশীল| ম্যাচুউরিটি হল কবিতার উত্তরণের দিক| যা কবিতা হয়ে ওঠাকে সমর্থন করে| কবি ও কবিতার ভেতরের অর্থময়তাকে রেডিয়েশনের মতো ছড়িয়ে দেয় কাব্যসংসারে| 




১৯. আফজল আলির জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্ট আগের কোনো 'ইজম' বা ' কালখন্ড'-কে বাতিল না করে Adopt  করতে চায় উন্মুক্ত পরিসর--এতে নতুন প্রজন্মের কবিতায় কী প্রভাব পড়বে বলে আপনি মনে করেন?

বিশ্বজিৎ : "যেখানে স্বাধীনতা আছে, সেখান আকাশ আছে আয়নার মতো"—এএইটুকুই বলার|




২০.  ইদানিং অনেকে Automatic writing বা  Unedited  কবিতা লিখছেন। এর প্রভাব বাংলা কবিতায় / সাহিত্যে কতটা পড়বে বলে আপনার মনে হয়?

বিশ্বজিৎ : আমি নিজে লিখি এবং বিশ্বাস করি, কোনো এক অলিখিত কথা; যা রয়ে গেছে অনেক বছর আগে কিংবা গতকালই, তাই নিয়তির মতো উঠে আসে কবির কলমে| কবি এক্ষেত্রে সহযোগীমাত্র| শুধু শব্দবন্ধের আবেগ ও মুক্তচিন্তনের ভার থাকে কবির ওপর|





২১. আধুনিকে Vertical thinking  উত্তর আধুনিকে Leteral বা  Horizontal Thinking-এর বদলে জিরো বাউন্ডারিতে Liberal Thinking এর  প্রাধান্য এবং গুরুত্ব- এ সম্পর্কে আপনার ধারণা যদি আমাদের পাঠকদের জানান।

বিশ্বজিৎ : কবি কারও ভাবনার দাস নন| তিনি তাঁর নিজের ইচ্ছা ও ভাবনা দ্বারা পরিচালিত হবেন এবং সৃষ্টির মধ্যে নিজস্বতার ছাপ রাখবেন; এটাই আফজল আলি প্রণীত জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্টের লিবারাল থিঙ্কিং-এর অংশ এবং আমারও সমর্থন এই বক্তব্যে|





২২. আপনার কয়েকটি অপ্রকাশিত কবিতা আমাদের পাঠকদের উপহার দিন।. কবিতার জাড্য বা জড়তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য জিবাক কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে আপনার মনে হয়?


নিজের সঙ্গে রক্তের
বিশ্বজিৎ দাস

হয়তো অস্বীকার ও শিকারের দ্বন্দ্ব
বহুদূরে নিয়ে গেছে তাকে; মনপাখি ধরা মায়াজালে
এসেছে সে, বীতংস? বীতংস তার নাম...

খরস্রোতা নদীতে যেভাবে আসে মাছেদের আনন্দ
সে আসে তেমনিভাবে, হৃদয়াকৃতির ঝাউবনে...
হাত ঈশারা করে স্বপ্নকে; শীতের বয়সী কালোজাম!




বীতংস, শব্দে শব্দে সোহাগ| পুত্রের জন্যে
গাছের বাকলের ক্ষত থেকে ঝরে ঋণ
নরম ঘাসেরা হাসে, প্রথম রোদের মতো চোখে
চোখাচোখি হয় আমাদের ব্যক্তিগত স্পর্শের...

মুখের চারিদিকে ওঠে নীরবতার মতো কান্তি
প্রাণোচ্ছল এই অপুষ্ট হৃদয় নেমে পড়ে খাদে
নিজের ভিতরে পায় না আমাকে...




অসামান্য এই হৃৎপিণ্ডের মধ্যে হত্যার আগুন জ্বালি
কিছুই করিনি; দূরে গেলাম মৃত হয়েই তো...
তুই তো জানিস, মৃত কুয়াশার জীবন আমার
আরেকবার তুইও হলি সমুদ্রের অসুখ আর
ছিঁড়ে যাচ্ছে গোপন বক্তব্যশালা...

ওখানে এমন রোদ নেই জেনেও
নিজের ক্ষয় দেখবি আয়নায়; আমিও দেখব
প্রতিদিন মৃত্যুর মতো বন্ধনে তোকে...
কোথাও ফুটেছে হাসি, শব হয়ে চলে যাব তার কাছে...




নক্ষত্রের চোখে দেখেছি তোকে খেলতে
বড় মায়াময় অকৃতজ্ঞ এই মস্তিষ্ক; ছেড়ে গেছে
পৃথিবীর সুন্দর হে গোলাপগুচ্ছ! তোকে মনে রেখে
আমিও কিনতে থাকি আয়না, কিনব মৃত্যু সকল...

জানি কষ্টের প্রসব ঘিরে ধরেছে তোকে, তার সাথে
আমার রুক্ষ প্রান্তের কোনো মিল নেই আজ অবধি
তবুও কালো মেঘ ফুটে আছে বুকের কোণে;
অবশিষ্ট এই সারাৎসার নিয়ে বেঁচে থাকবি তুইও...




মোহমুগ্ধতা বেদনার হাতগুলি আজ উধাও
গাছের কাছে নীরব জল, পাখির কাছে নীরব আকাশ
এসবের মাঝে রেখে যাই ছুঁয়ে না দেখার দংশন|
জানিস, একদিন শিকড়ের টানে ভিজবে গদ্য...

অনুপস্থিতিতে বেজে উঠছে আমার শব্দবন্ধ
তোকে নিয়ে তাই লিখছি অসমাপ্ত কবিতা
ব্রিজের নিচে যে শূন্যতা শুয়ে আর্তনাদের ঢেউয়ে
অপেক্ষা করিস; ফিরবে একদিন আমাদের অন্ত্যমিল






No comments:

Post a Comment